সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি (পাঠ-১)

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ | NCTB BOOK
715

১৯৭০ সালে সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । কিন্তু বিজয়ী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ষড়যন্ত্র শুরু করে। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বার বার স্থগিত ঘোষণা করলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের মার্চের শুরু থেকে অসহযোগ আন্দোলন এবং ৭ই মার্চ ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে' তোলার ডাক দেন। ফলে বাঙালির স্বাধীনতার প্রস্তুতি শুরু হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ২৫শে মার্চ বর্বর গণহত্যা শুরু করে। ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধও মুক্তিযুদ্ধ। মুজিবনগরে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনায় পরিচালিত নয় মাসের যুদ্ধ শেষে ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালি বিজয় অর্জন করে ।

একদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতি নেয় আর অন্যদিকে তৎকালীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো তা বানচালের জন্য ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। তিনি ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন সংকট তৈরি করেন। পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া তীব্র হয়। ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচিতে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। বিশেষ করে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। এছাড়া শিক্ষক, পেশাজীবী ও মহিলা সংগঠনগুলোও এগিয়ে আসে। একাত্তরের মার্চের শুরু থেকে প্রতিদিনের সকল সমাবেশে প্রচুর লোকের সমাগম ঘটে। ভূট্টোর সাথে ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১লা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করার আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ফলে এই দিন আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠকে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। জনগণ এবারও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দের। শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের আরেক অধ্যায়-অসহযোগ আন্দোলন।

আওয়ামী লীগ ২রা মার্চ ১৯৭১ ঢাকা শহরে ও ৩রা মার্চ সারা দেশে হরতালের ডাক দেয়। ২রা মার্চ সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিশাল সমাবেশে ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নেতৃবৃন্দ দেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এটিই ছিল সর্বসাধারণের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলিত 'স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা। মুক্তিযুদ্ধে এ পতাকা ছিল আমাদের প্রেরণা। ৩রা মার্চ থেকে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন বা ২৫শে মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ওরা মার্চ গঠিত হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। এতে আন্দোলন আরও বেগবান হয় । ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করে এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইশতেহার ঘোষণা করে।

এ পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে ইয়াহিয়া খান ৬ই মার্চ এক বেতার ভাষণে ২৫শে মার্চ ঢাকায় পুনরায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে ঘোষণায় সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। এ পরিস্থিতিতে ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার জন্য আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জনসভার আয়োজন করা হয়

কাজ : পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে বাঙালির প্রস্তুতির চিত্র তুলে ধরো।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।